প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিবেন এবং লোন নেওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম
আপনারা যারা আর্থিক সমস্যার কারণে বিদেশ যেতে পারছেন না। অথবা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক কিছু অর্থ প্রয়োজন। তারা চাইলে খুব সহজে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন। নিম্নে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া অর্থাৎ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম তুলে ধরা হলো।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য আপনার বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
- লোন আবেদন ফরম (যা ব্যাংক থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন)।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি রঙিন ছবি।
- ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- বর্তমান ঠিকানা প্রমাণপত্র
- স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণপত্র
- পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট এর ফটোকপি
- ভিসার কপি ও ম্যানপাওয়ার স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি।
- লেবার কন্টাক্ট পেপার (Optional)
- দুইজন জামিনদারের সদ্য তোলা এক কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- জামিনদারের ভোটার আইডি কার্ডের (NID) ফটোকপি।
- পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।
- জামিনদারদের থেকে যেকোন একজনের স্বাক্ষর ব্যাংকের ৩টি চেক পাতায় থাকতে হবে।
- লোন গ্রহণের পূর্বে অত্র ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট যেকোন শাখায় হিসাব খুলতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন মেয়াদ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার পরে ব্যাংকের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে টাকা পরিশোধ করতে হবে। সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
- নতুন ভিসার ক্ষেত্রে লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ বছর হতে হবে।
- রি. এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রে লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ২ বছর হতে হবে।
আরোও পড়ুন: অ্যাপ থেকে লোন নিন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার পরে আপনাকে ব্যাংকের নির্ধারিত সুদের হার অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুদের হার ৯%। এখানে আপনার লোনের টাকা পরিমাণ অনুযায়ী ৯% হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার পরে আপনার টাকার পরিমান অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার পূর্বে দুই মাস গ্রেস পিরিয়ড বাদ দিয়ে মাসিক কিস্তিতে লোন পরিশোধযোগ্য। দুই মাসের পর থেকে মাসিক কিস্তিতে আপনার টাকা পরিমাণ অনুযায়ী লোন পরিশোধ করতে হবে।
সেবা প্রদানের সময়সীমা
সেবা প্রদানের সময়সীমা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- আপনার কাগজপত্র অথবা ডকুমেন্টগুলো যদি ঠিক থাকে তাহলে ৩/৭ কর্ম দিবসের মধ্যে এই লোনটি পেয়ে যাবেন।
- লোনের নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে কোন প্রকার সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে না।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের ফরম পূরণ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন ফরমটি ওপেন করুন। এখন প্রথমেই ‘তারিখ’ নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার আবেদনের তারিখটি লিখুন। তারপর ‘ব্যবস্থাপক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের’ নিচে আপনার ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নাম দেখতে পাবেন। এরপর আপনি কোন তারিখে কত টাকা লোন নিতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করুন। এরপর আপনার জামিনদাতার নাম ও লোন পরিশোধের অর্থের পরিমাণ উল্লেখ পূর্বক ফরমটি পূরণ করতে হবে।
তাঁরপর নিচে আপনার যাবতীয় তথ্যবলি সঠিকভাবে উল্লেখ করুন। যেমন:
১ম পৃষ্ঠা:
- নাম (বাংলায়)
- Name (ইংরেজি)
- পিতা/ স্বামীর নাম (বাংলায়)
- Father’s/Husband’s Name (ইংরেজি)
- মাতার নাম
- Mother’s Name
- জন্ম তারিখ
- বর্তমান ঠিকানা
- Present Address
- স্থায়ী ঠিকানা
- Permanent Address
- নিজ জেলা
- জাতীয়তা
- ধর্ম
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পাসপোর্ট নম্বর
- ফোন নম্বর বাসা, অফিস, মোবাইল
- ভোটার আইডি নম্বর এবং
- বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর
এখন উপরে উল্লেখিত সকল অপশন গুলো সঠিকভাবে লিখুন। তারপর নিচে ‘আবেদনকারীর স্বাক্ষর’ অপশনে আপনার স্বাক্ষর প্রদান করুন। তাঁরপর নিচে আরোও একটি ফরম দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার জামিনদারের তথ্য প্রদান করে ফর্মটি পূরণ করতে হবে। এখানে আপনাকে দুইজন জামিনদারের তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন:
২য় পৃষ্ঠা: ১ম জামিনদারের তথ্য নিম্নে দেওয়া হলো:
- নাম (বাংলায়)
- Name
- পিতা/ স্বামীর নাম
- Father’s/Husband’s Name
- মাতার নাম
- Mother’s Name
- জন্ম তারিখ
- বর্তমান ঠিকানা
- Present Address
- স্থায়ী ঠিকানা
- Permanent Address
- সম্পর্ক
২য় জামিনদারের তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- নাম (বাংলায়)
- Name
- পিতা/ স্বামীর নাম
- Father’s/Husband’s Name
- মাতার নাম
- Mother’s Name
- জন্ম তারিখ
- বর্তমান ঠিকানা
- Present Address
- স্থায়ী ঠিকানা
- Permanent Address
- সম্পর্ক
তাহলে উপরে উল্লেখিত অপশনে আপনার জামিনদার অর্থাৎ, ১ম এবং ২য় জামিনদারের তথ্য প্রদান করুন এবং নিচে ৫টি অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো আপনাকে সাবমিট করতে হবে। যেমন:
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ২কপি সত্যায়িত ছবি, ভোটার আইডি কার্ড (NID) সত্যায়িত কপি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা প্রমাণপত্র সহ চেয়ারম্যান/মেম্বারের দেওয়া সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি।
- জামিনদারের প্রত্যেকের পাসপোর্ট সাইজেন দুই কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি। এন আইডি কার্ডে,স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সহ চেয়ারম্যান/মেম্বারের দেওয়া সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি।
- স্থানীয় ভাষায় অনুবাদকৃত ভাষায় কপি (প্রয়োজন সাপেক্ষ)। একক ভিসা হলে দূতাবাস/Consoler অফিস কর্তৃক সত্যায়িত কপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
- শারীরিক যোগ্যতার সার্টিফিকেট অর্থাৎ মেডিকেল রিপোর্ট।
এখন উপরে উল্লেখিত সকল তথ্য আপনাকে সাবমিট করতে হবে। তাঁরপর নিচে ‘অভিবাসন ব্যয়ের বিবরণী’ নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন এবং সেখানে অনেক গুলো অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- বিমান ভাড়া
- বীমা
- ট্যাক্স ও অন্যান্য কর
- কল্যাণ তহবিল
- মেডিকেল
- রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট ফি
- ভিসা ফি ও
- বিবিধ
এখানে আপনার যদি বিভিন্ন ধরনের ব্যয় থাকে। তাহলে তার ডকুমেন্ট দিয়ে অপশন গুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং নিচে ‘আবেদন কারীর স্বাক্ষর’ অপশনে আপনার স্বাক্ষর প্রদান করুন।
৩য় পৃষ্ঠা
তাঁরপরে আপনাকে আরোও তথ্য এখানে এড করতে হবে। যেমন:
- কর্মস্থানের ঠিকানা, Telephone/E-mail (Optional)
- ভিসার যথার্থতা সত্যায়িত বিষয়ে বিএমইটি/বোয়েসেলের প্রত্যয়ন কপি
- গৃহীত লোন ফেরত দানের ফিরিস্তি
- কর্ম অভিজ্ঞতার স্বপেক্ষ সনদ (Optional)
- আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ যেতে চাচ্ছেন। সেই এজেন্সির প্রত্যয়ন রঙিন কপি
- হলফনামা
- বিদেশগামী কর্মীর পরিবারের বিস্তারিত তথ্য এবং
- আবেদনকারী সম্পত্তির বিবরণ
তারপর নিচে এমন একটি বক্স দেখতে পাবেন। সেখানে জামিনদারের অনুকুলে লোনের পরিমানের তথ্যাদি দিয়ে বক্সটি সম্পূন্ন করুন।
ফরমটি সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে পূরণ করা হয়ে গেলে। এর সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যুক্ত করে নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় আবেদন দাখিল করুন। তারা আপনার আবেদনটি গাছে বাছাই করে সব কিছু ঠিক হলে আগামী তিন থেকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে আপনার লোনটি অনুমোদন করে দেবে। এভাবে আপনি খুব সহজে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন করতে পারবেন।
আশা করি, আর্টিকেলটি পড়ে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন বঙ্গদেশ২৪ ওয়েবসাইটে।
আজকের আলোচনা
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৪
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগবে?
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন ফরম
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায়