পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধ হচ্ছে কেন? এটি তুলে দেওয়ার দাবি কাদের?

পুলিশ ভেরিফিকেশন কি দেখে করা হয়? এটি তুলে দেওয়ার দাবি কেন? বা পুলিশ ভেরিফিকেশন কি, বা কেন করা হয়? এটি বাতিল করা কতটা চুক্তি সঙ্গত। এসব বিষয়ে জানুন আজকের পোস্টে।

 

পুলিশ ভেরিফিকেশন কি

সাধারণত, চাকরি, পাসপোর্ট, লাইসেন্স, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে ব্যবহার বা অন্যকোন প্রয়োজনে আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার পাশাপাশি প্রার্থীর চারিত্রিক ও সমাজিক অবস্থান সম্পর্কে তথ্য যাচাই করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়।

স্থানীয় থানার পুলিশ গোপনে বা প্রকাশ্যে প্রার্থীর স্থানীয় ঠিকানায় সরেজমিন তদন্ত করে থাকেন। পুলিশের তথ্য অনুসারে ভেরিফিকেশন করার সময় সাধারণত ২১ টি বিষয়ে যাচাই করা হয়। যেমন:

  • প্রার্থীর পিতা-মাতার নাম
  • জন্ম তারিখ
  • জন্ম সাল
  • জাতীয়তা
  • স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
  • বৈবাহিক অবস্থা
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
  • চাকরি ইত্যাদি।

 

পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল কতটা যুক্তিসঙ্গত?

পুলিশ ভেরিফিকেশনে নানা মূখী হয়রানি ও দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি তুলে দেওয়ার সপক্ষে সুপারিশ করেছেন জনপ্রসাশন সংস্থার কমিশন। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন পুরোপুরি তুলে দিলে প্রার্থী বা আবেদনকারীর দেওয়া তথ্যের সচ্চতা ও সার্বিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হিসেবে স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করতে গিয়ে অনেকের সরকারি চাকরির নিয়োগ আটকে যাওয়ার যেমনি অভিযোগ পাওয়া গেছে, তেমনি অনেকের পাসপোর্ট ভেরিফাই করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির কথা জানা গিয়েছে।

আবেদনকারীর দেওয়া তথ্যের সচ্চতা নিশ্চিত করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা ভোগান্তি, পক্ষপাত মূলক আচরণ বা ঘুষ নেওয়ার মতো অভিযোগ এই পদ্ধতিকে কুলুষিত করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

আরোও পড়ুন: বাংলাদেশের যত ব্রেকিং নিউজ আজ ২৮ ডিসেম্বর

তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি পুরোপুরি বন্ধ করার সুপারিশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে যেমনি মনে করছেন এই প্রথা বাতিল করলে হয়রানি ও দূর্ণীতি বন্ধ করবে। তেমনি ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ বন্ধ করলে ব্যক্তি তথ্যের সচ্চতা নিশ্চিত করা যাবে না। যা নিরাপত্তাকে ব্যপকভাবে ঝুকির মুখে ফেলবে বলে মত অনেকের।

গত ১৯ নবেম্বর পুলিশ সংস্থার কমিশন চাকরি ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই বন্ধ করার সুপারিশ করবে বলে জানায়। ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দূর্ণীতি বন্ধ হওয়া জরুরি। প্রার্থী বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করা অযুক্তিক।

সবশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুলিশ ভেরিফিকেশন পুরোপুরি তুলে দেওয়া সুপারিশের কথা জানিয়েছেন। এখন থেকে চাকরি কিংবা অন্য যেকোন সেবার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক থাকছে না, বলে জানান পুলিশ কমিশন।

আরোও বলেন নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট পাওয়া সবার অধিকার। উন্নতদেশে যেমন পাসপোর্টের পোষ্টের মাধ্যমে সরাসরি আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশেও তাই হবে।

 

পুলিশ ভেরিফিকেশন ও প্রয়োজন

তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন পুরোপুরি তুলে দেওয়া অযুক্তিক বলে মত দিয়েছেন সাবেক পুলিশ পরিদর্শক নূরুল হুদা। তার মতে ব্যক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর প্রয়োজন আছে। মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা শুরু হয়েছে ১৯২০ এর দশকে।

তখন এই প্রথার মূল লক্ষ ছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমন করতে চাকরি প্রার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করতে। যদিও বর্তমানে অনেকে মনে করেন এটি বিরোধী মতধারাকে দমন, বৈষম্য ও হয়রানির হাতিয়ার হয়ে দাড়িয়েছে।

 

বিকল্প উপায় কি?

আবেদনকারীর তথ্য যাচাই এর উপর জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। বিশেষ করে কোন ব্যক্তির নাম পৌষ ধারী মামলা আছে কিনা। তার আচরণ কেমন সেটা জানা দরকার বলে দাবি করেন তারা। তাই তারা বিকল্প উপায় দেখার কথা বলে জানিয়েছেন। যাতে করে প্রার্থীরা হয়রানি থেকে মুক্তি পায় এবং দূর্ণীতি পথ বন্ধ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *